নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:২৮
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে একটি বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা চলছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে। কিন্তু মানুষের আকাঙ্ক্ষা, কষ্ট ও চাহিদার জায়গাগুলো বুঝতে হবে। এসব অনিশ্চয়তার অবসান না হলে সংকট আরও বাড়বে।
নাগরিক সমাজের জায়গা থেকে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সমাধানের জন্য, সমাধানের তাগাদা তৈরির জন্য, যাঁরা এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করে আছেন, তাঁরা একে অপরকে দেখছেন। কিন্তু জানালার বাইরে তাকানো খুবই প্রয়োজন। জানালার বাইরে অভিব্যক্তিগুলো কী? ইমোশনসগুলো কী? সেগুলো কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে হোসেন জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন। ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শিরোনামে এ বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো।
হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘কমিশন অসম্ভব পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু আমি একধরনের সীমাবদ্ধতা দেখেছি পুরো আয়োজনের। একটির ওপর তাঁরা ব্যাপক নজর দিয়েছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে।’
রাজনৈতিক দলের মধ্যে নানা মতপার্থক্য সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্বার্থে কমিশন যে দীর্ঘ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, সেটাকে ধন্যবাদ জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য নতুন ব্যাপার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন সংযোজন হলো এই যে আমরা একসঙ্গে সমাধানগুলো খুঁজেছি।
হোসেন জিল্লুর বলেন, পিপিআরসির গবেষণা বলছে, দারিদ্র্যের মাত্রাটা আগে থেকেই বাড়ছে। সম্প্রতি বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যানও দেখা গেল। আবার শিক্ষায় ঝরে পড়াও বেড়েছে। এই বাস্তবতা বুঝতে হবে। এগুলো বাড়ছে তার অন্যতম একটা নিয়ামক হচ্ছে অনিশ্চয়তা। অনিশ্চয়তার কারণেই কিন্তু অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং জীবিকায় একধরনের দীর্ঘমেয়াদি খাদ তৈরি হচ্ছে। এই বিষয়গুলোতে একটা তাগাদা তৈরি করা প্রয়োজন।
হোসেন জিল্লুর বলেন, এই আলোচনাটা একধরনের এলিট নাগরিক বলয়ের ভেতরে থেকে পরিচালিত হওয়ায় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। কাঠামোগত সংস্কারের জন্য অঙ্গীকারের কথা আসছে। কিন্তু অঙ্গীকার নিয়ে রাজনীতিবিদদের ওপর একধরনের অনাস্থা আছে। অনাস্থাটা হলো রাজনীতিবিদেরা কোনো না কোনোভাবে এগুলো রাখবে না, এখান থেকে বেরিয়ে যাবে। অথচ রাজনীতিবিদেরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় এবং তাঁদের মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হচ্ছে।
অঙ্গীকার নিয়ে এত কথা হচ্ছে কিন্তু দুর্নীতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশন কেন একটা অঙ্গীকারের প্রস্তাব তৈরি করল না, সেই প্রশ্ন তোলেন হোসেন জিল্লুর। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে তো এটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা সুস্পষ্ট করা যেত।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয়। সঞ্চালনা করেছেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন উপস্থিত আছেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।