নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক
জরিপে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা মনে করেন, নির্বাচনে সব দলকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত। অন্যদিকে ৪৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বিচার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। ‘জনগণের নির্বাচন–ভাবনা’ শীর্ষক জরিপের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার রাজধানীর জাতীয় আরকাইভস মিলনায়তনে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। জরিপটি পরিচালনা করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভিশন কনসাল্টিং। সহযোগিতা করেছে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম ও বিআরএআইএন। জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়া নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতার হার বেড়েছে বলেও জানানো হয়।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশের ১০ হাজার ৪১৩ জন বিভিন্ন বয়সী ভোটারের ওপর জরিপটি চালানো হয়। একই প্রতিষ্ঠানের গত মার্চ মাসের জরিপে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’ বলেছিলেন ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪ হাজার ৭২১ জন উত্তরদাতা ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের দলের কথা প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা গেছে, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ উত্তরদাতার পছন্দের দল বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেছেন ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা। আর জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পছন্দ করেছেন ৪ দশমিক ১০ শতাংশ উত্তরদাতা।
নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতার পছন্দ কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দল আওয়ামী লীগ। চলতি বছরের মার্চের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দিতে চাওয়া ব্যক্তিদের হার বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
জরিপে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, নির্বাচনে সব দলকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত। অন্যদিকে ৪৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বিচার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।
জরিপ অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে ভোটের দিক থেকে লাভবান হবে বিএনপি ও জামায়াত। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে ভোট দিতে চেয়েছেন ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা। জামায়াতকে ভোট দিতে চেয়েছেন ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট দিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন-এমন প্রশ্নে দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ছয়টি বিভাগের উত্তরদাতারা বিএনপিকে এগিয়ে রেখেছেন। জামায়াত এগিয়ে রয়েছে রংপুর বিভাগে। আর বরিশাল বিভাগে এগিয়ে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ।
জরিপে অংশ নেওয়া ১০ হাজার ৪১৩ জনের মধ্যে ৪ হাজার ৭২১ জন ভোটে নিজেদের পছন্দের দলের কথা জানিয়েছেন। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। এসব বিভাগে বিএনপিকে সমর্থন করেছেন যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ, ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার।
অন্যদিকে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতার সমর্থন নিয়ে রংপুর বিভাগে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। আর ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার সমর্থনে বরিশাল বিভাগে এগিয়ে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোটারের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির পক্ষে সমর্থন বেড়েছে, উল্টো ঘটেছে জামায়াতের ক্ষেত্রে। আর শিক্ষা বাড়ার সঙ্গে ভোটাররা মত দিয়েছেন জামায়াতের পক্ষে, উল্টো ঘটেছে বিএনপির বেলায়। জেন-জি ও নারীদের মধ্যে জামায়াতের সমর্থন বেশি।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, আগামী সরকার গঠনের জন্য সবচেয়ে যোগ্য দল বিএনপি। জামায়াতকে যোগ্য মনে করেন ২৮ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা। ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা যোগ্য দল মনে করেন আওয়ামী লীগকে। আর এনসিপিকে যোগ্য মনে করেন ৪ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় রাজনীতি নিয়ে সন্তুষ্টির বিষয়ে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এতে এগিয়ে জামায়াত। জামায়াতের কার্যক্রমে শতভাগ, অনেক ও মোটামুটি সন্তুষ্ট ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর দলটির কার্যক্রমে একেবারেই সন্তুষ্ট নন ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। এরপরই রয়েছে এনসিপি। এনসিপির কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। আর একেবারেই সন্তুষ্ট নন ১৭ শতাংশ।
অন্যদিকে বিএনপির কার্যক্রমে শতভাগ, অনেক ও মোটামুটি সন্তুষ্ট ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা। আর দলটির কার্যক্রমে একেবারেই সন্তুষ্ট নন ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা। কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও উত্তরদাতারা সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমে। দলটির কার্যক্রমে একেবারেই সন্তুষ্ট নন ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা। তবে দলটির কার্যক্রমে শতভাগ, অনেক ও মোটামুটি সন্তুষ্ট ২৬ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাঁরা যদি ভোট না দেন, তাহলে কেন দেবেন না। উত্তরে সবচেয়ে বেশি ৩২ দশমিক ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থার অভাবের কথা বলেছেন ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা। আর পছন্দের দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ উত্তরদাতা।
জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ এম শাহান, ভয়েস ফর রিফর্মের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর, বিআরএআইএনের নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাইমা ইসলাম।