আন্তর্জাতিক

বিজয়ের সমাবেশে প্রাণহানির ঘটনায় মামলা, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৫১

বিজয়ের সমাবেশে প্রাণহানির ঘটনায় মামলা, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি



ভারতের তামিলনাড়ুর কারুর রাজ্যে অভিনেতা-রাজনীতিক বিজয় থালাপাতির সমাবেশে পদদলনে ৪০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে।


মামলায় বিজয়ের দলেই শীর্ষ দুই নেতাসহ সাত জনের নাম এসেছে।


এনডিটিভি লিখেছে, পুলিশের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে তামিলাগা ভেটরি কাজাগম (টিভিকে) দলের সাধারণ সম্পাদক এন আনন্দ ও পুদুচেরির সাবেক বিধায়ক বুসি আনন্দ, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি নির্মল কুমার, পশ্চিম কারুর জেলা সম্পাদক মাথিয়াজগন এবং আরও তিনজনকে।



তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক হত্যা নয় এমন হত্যাকাণ্ড, মানুষের জীবনঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে এমন উদাসীন কাজ ও সরকারি কর্মকর্তাদের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।


এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুর সরকারি সম্পত্তি (ক্ষয়ক্ষতি ও লোকসান প্রতিরোধ) আইন অনুযায়ী মামলা হয়েছে।


ডিএমকে নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার অভিযোগ করেছে, বিজয়ের নির্বাচনি সভায় নিরাপত্তাবিধি লঙ্ঘন হয়েছে বলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও আয়োজনকারীরা পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয়জলের ব্যবস্থা করেননি, ফলে অনেক লোক ভিড়ে বেসামাল হয়ে পড়েন।



এদিকে, এই ঘটনায় নিহতদের পরিবার প্রতি ২০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিজয় থালাপতি।


শনিবার রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশের পাশাপাশি তামিলাগা ভেটরি কাজাগম (টিভিকে) দলের প্রধান বিজয় এক্স পোস্টে বলেছেন, “পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে নিহতদের পরিবার প্রতি ২০ লাখ এবং আহতদের ২ লাখ রুপি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এটি ক্ষতির তুলনায় নগণ্য হলেও এই মুহূর্তে দায়িত্ব পালনের জন্য আমি পাশে দাঁড়াচ্ছি।”


এ ঘটনার পর বিজয় নিরাপত্তাবিধি লঙ্ঘন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সভার সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও পুলিশের শর্তাবলীর লঙ্ঘন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।



এর আগে, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন নিহতদের পরিবার প্রতি ১০ লাখ রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন ও আহতদের জন্য ১ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিলেন।


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নিহতদের পরিবার প্রতি ২ লাখ ও আহতদের ৫০ হাজার রুপি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।


তামিলনাড়ু ডিজিপি জি. ভেঙ্কটারামন স্বীকার করেছেন, সমাবেশে মাত্র ৫০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন ছিল। ঘটনার পরই মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুষ্ঠু বিচার কমিশনের মাধ্যমে ঘটনা তদন্তের ঘোষণা এবং আহতদের জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করেছেন।


অভিনয়ের জগত থেকে রাজনীতির মাঠে আসা ৫১ বছর বয়সী বিজয়ের কারুর জেলার সমাবেশে পদদলনের ঘটনায় শিশুসহ অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু এবং আরও ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।


এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই জায়গায় ‘অন্ততপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ সমবেত’ হয়েছিল।


সমাবেশে উপস্থিত হতে বিজয়ের গাড়িবহরের ছয় ঘণ্টারও বেশি দেরি হয়, এর মধ্যে স্রোতের মত মানুষ সমাবেশস্থলে এসে হাজির হয়। এক পর্যায়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে ঘটনাটি ঘটে।


ভিড়ের চাপ অসহনীয় হয়ে উঠলে রাজনৈতিক দলটির কয়েকজন কর্মী ও শিশুসহ বহু মানুষ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বলেছেন, হঠাৎ মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ার পর আতঙ্ক তৈরি হয়, চাপের কারণে অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না।


কর্মীদের সতর্ক সঙ্কেতের মুখে বিজয় মাঝপথে তার বক্তৃতা থামিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। প্রচারের বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া লোকজনকে সহায়তা করতে ভিড়ের দিকে পানির বোতল ছুড়ে দিতে থাকেন।


এরমধ্যে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স ছুটে এলেও রাস্তা মানুষজনে পরিপূর্ণ হয়ে থাকায় ভেতরে ঢোকার পথ পাচ্ছিল না, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।


বিজয়ের সমাবেশে এর আগেও ভিড়ের চাপে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের অক্টোবরে তার রাজনৈতিক দলের প্রথম সমাবেশেই অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছিল।


তিন দশক ধরে বিজয় তামিল সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা। সিনেমায় ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি।


তামিলাগা ভেটরি কাজাগম (টিভিকে) দল গড়ে তুলে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিনেমা ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।