অর্থনীতি

তিন মাসে মোটরসাইকেল বিক্রি বেড়েছে ৩১%

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ই অক্টোবর ২০২৫, ১৮:১৬

তিন মাসে মোটরসাইকেল বিক্রি বেড়েছে ৩১%


দেশের মোটরসাইকেল শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাতে বিক্রি বেড়েছে ৩১ শতাংশ।


মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সংযোজনকারী দুটি কোম্পানির দুজন নির্বাহী মনে করছেন, মোটরসাইকেল খাতের এই ঘুরে দাঁড়ানো সাময়িক নয়, বরং তা স্থায়ী হতে পারে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভালো প্রবৃদ্ধি আশা করছেন তাঁরা। এর কারণ তিনটি।


প্রথমত, মানুষ অনিশ্চয়তা কিছুটা কাটিয়ে উঠে ব্যয় করা শুরু করেছেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলে ভোক্তা ব্যয় কমে যায়। দ্বিতীয়ত, শীত মৌসুম ও আগামী পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বিক্রি বাড়বে। তৃতীয়ত, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেচাকেনা ভালো হবে।



হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) বিজয় কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাধারণ বেচাকেনার বাইরে ২৫–৩০ হাজার মোটরসাইকেল বেশি বিক্রি হবে।’


বাজারে মোট কত মোটরসাইকেল বিক্রি হয়, তার হিসাব রাখে কোম্পানিগুলো। তাদের হিসাবে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজারের কাছাকাছি, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। গত বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মতো বড় বড় রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছিল। সব মিলিয়ে দেশ পরিবর্তনের মধ্যে ছিল। এ ধরনের সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সাধারণত ভালো যায় না।


এ বছর মূল্যস্ফীতি আগের চেয়ে কমেছে। সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল খাতের নির্বাহীরা বলছেন, মার্কিন ডলারের দাম স্থিতিশীল হওয়ায় মোটরসাইকেল ও যন্ত্রাংশ আমদানি সহজ হয়েছে। এতে সরবরাহ সংকট কেটেছে।

তিন মাসের আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।


কার কত বিক্রি


তিন মাসের হিসাবে বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছে জাপানের ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই মোটরস। তারা ২২ হাজার ৬৬৭টি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। দেখা যাচ্ছে, তিন মাসে বাজার হিস্যায় এগিয়ে রয়েছে ইয়ামাহা।


জানতে চাইলে এসিআই মোটরসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, বাজার হিস্যায় তাঁরা এগিয়ে গেছেন কয়েকটি কারণে। এর মধ্যে রয়েছে, ভারতীয় ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের সঙ্গে দামের পার্থক্য কমে গেছে। একসময় তা ২৫ শতাংশ ছিল, এখন ১০ শতাংশের নিচে। এসিআইয়ের বিক্রয়–পরবর্তী সেবার মান অত্যন্ত ভালো। নতুন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মোটরসাইকেল তাঁরা নিয়ে আসছেন।


সুব্রত রঞ্জন বলেন, মোটরসাইকেল মানুষ মূলত কেনে বর্তমান ব্যবহারকারীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে। সে ক্ষেত্রে ইয়ামাহার গ্রাহকেরা সন্তুষ্টি থেকে অন্যকে কেনার পরামর্শ দেন। আর জাপানি পণ্যের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা রয়েছে।


বিক্রির পরিমাণের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপানি আরেক ব্র্যান্ড সুজুকি। তাদের বিক্রির পরিমাণ ২২ হাজার ১৪১টি। প্রবৃদ্ধি ২৩ শতাংশ।


ভালো করেছে জাপানের হোন্ডাও। বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড বিক্রি করেছে ২১ হাজার ৫৮১টি মোটরসাইকেল। প্রবৃদ্ধি ৫৫ শতাংশ। বিক্রি বৃদ্ধির দিক দিয়ে এগিয়ে আছে ভারতের হিরো ব্র্যান্ড। হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেড বিক্রি করেছে ১৭ হাজার ৭৮১টি মোটরসাইকেল, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১৩ শতাংশ বেশি।


এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা স্বল্প সিসির (ইঞ্জিন–ক্ষমতা) মোটরসাইকেলে আধুনিক প্রযুক্তি যোগ করেছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেলের নতুন মডেল বাজারে আসার পরপরই তা বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। নতুন নতুন রঙের মোটরসাইকেল বাজারে ছাড়ছে। এসবই তাদের ভালো করার কারণ।

তিন মাসে বাজারে যত মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, তার ৫৩ শতাংশ (৫৭ হাজার ৫৪৭টি) ১৫০ সিসি বা তার বেশি ক্ষমতার। বাজারের এই অংশে এগিয়ে রয়েছে ইয়ামাহা (২১ হাজার ৭৪০টি)। এরপর রয়েছে সুজুকি, হোন্ডা, বাজাজ ও রয়েল এনফিল্ড।


‘প্রত্যাশা অনুযায়ী বাজার বড় হয়নি’


২০১৮ সালের পর থেকে দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে ৯টির মতো কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে জাপানের ইয়ামাহা, হোন্ডা ও সুজুকি এবং ভারতের হিরো ছাড়াও রয়েছে বাজাজ ও টিভিএস। দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে রয়েছে রানার অটোমোবাইলস। গত বছর বাজারে এসেছে যুক্তরাজ্যের রয়েল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল। বিগত সময়ের বার্ষিক হিসাবে বাজার হিস্যায় এগিয়ে বাজাজ।


২০১৮ সালে মোটরসাইকেল নীতিমালায় ২০২৭ সাল নাগাদ বার্ষিক উৎপাদন ১০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। সে হিসাবে ২০২৫ সালে অন্তত আট লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু খাতটি সেখান থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।


সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাজার বড় হয়নি।