নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ই অক্টোবর ২০২৫, ২০:১৫
সকাল তখন সাড়ে ১১টা। দিনের কর্মচঞ্চলতা শুরু হয়েছে আরও আগেই। কিন্তু হঠাৎই তা স্থবির হয়ে যায় ভয়াবহ এক আগুনে। রাজধানীর রূপনগর এলাকার শিয়ালবাড়িতে কসমি ফার্মা নামে একটি ক্যামিক্যাল গোডাউন ও একটি গার্মেন্টস কারখানায় এই আগুনের ঘটনা ঘটে। এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু এবং আটজন দগ্ধ হয়েছেন বলা জানা গেছে। তবে নিখোঁজের সংখ্যা কত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু যাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি, তাদের অপেক্ষায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
প্রিয়জনের জন্য কেউ কেউ হাতে ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা জানেন না, প্রিয় মানুষটি বেঁচে আছেন কিনা। কেবল মানুষটিকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায় এই চিত্র।
ছেলের শালিকা আসমা আক্তারকে খুঁজতে ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রেশমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘‘সকালে আগুন লাগার পর থেকেই আমরা ওর কোনও খোঁজ পাচ্ছি না। আমার ছেলে গিয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে খোঁজ করতে। এখনও পর্যন্ত আমরা ওকে (আসমা) খুঁজে পাচ্ছি না।’’
আসমা আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহের নেত্রকোনায়। তিনি ঢাকায় তার খালার বাসায় থাকতেন বলে জানান রেশমা।
মেয়ে ফারজানা আক্তারের (১৫) খোঁজে আগুনে পুড়ে যাওয়া গার্মেন্ট কারখানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা রতন। ফারজানা ওই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন বলে জানান রতন। তিনি বলেন, ‘‘আগুনের খবর পেয়ে আমার মেয়ের খোঁজে চলে এসেছি। এখনও তার কোনও হদিস পাইনি। আমাদের কিছু জানাচ্ছেও না। কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের বলা হয়েছে, যারা মারা গিয়েছেন, তাদের ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। আমরা আর কিছুই জানি না। শুধু মেয়েকে ফিরে পেতে চাই।’’
শফিকুল ইসলাম তার ভাগ্নী মাহিরার (১৪) ছবি হাতে এদিক-সেদিক খুঁজে চলেছেন। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ‘‘আমার ভাগ্নী মাহিরা। গার্মেন্টসের তিন তলায় কাজ করতো। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আগুন লাগার পর থেকে তাকে খুঁজছি। আশপাশের হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি। কোথাও খুঁজে পাইনি। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলেছি তারা বলেছে ধৈর্য ধরতে।’’
নিখোঁজ নারগিস আক্তারের বড় বোন লাইজু বেগম বলেন, ‘‘আমার বোন সকাল আনুমানিক ৮টায় কাজে আসে। সকাল ১১টায় খরব পাই, আগুন লেগেছে। সেখানের একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারি— কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। এরপর থেকে আর কোনও খোঁজ পাইনি। এখনও কোনও খোঁজ নাই— আমার বোন কোথায় আছে।’’
প্রত্যক্ষদর্শী বিইউবিটি’র শিক্ষার্থী আবু জাফর মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘‘আমি ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সময় আগুন দেখতে পাই। তখন থেকেই এদিকে আছি। আগুন লাগার পর দেখি কেমিক্যাল গোডাউনে ব্লাস্ট হচ্ছে। তারপরেই পাশের গার্মেন্টসে আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার ২০ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস আসে। তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।’’
উল্লেখ্য, মিরপুরের রূপনগরের কসমি ফার্মা নামে একটি ক্যামিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগে। পৌনে ১২টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করের। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে।