নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ই অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৪৩
পুড়ে যাওয়া ভবনের আশেপাশে বন্ধু সারোয়ারের ছবি হাতে মঙ্গলবার থেকেই খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন আমানুল্লাহ।
সারোয়ার মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়িতে পুড়ে যাওয়া একটি পোশাক কারখানায় ‘হেলপার’ হিসেবে কাজ করতেন।
বুধবার সারোয়ারকে ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাওয়ার কথা বলেছেন আমানুল্লাহ। তার মুখসহ পুরো শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুলের সঙ্গে জোড়া লাগানো আরেকটি আঙ্গুল দেখেই তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে শিয়ালবাড়ি এলাকায় কসমিক ফার্মা নামের একটি টিন শেড রাসায়নিকের গুদাম এবং পাশের ভবনে থাকা পোশাক কারখানায় আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়।
সেদিন রাত পর্যন্ত ১৬টি পোড়া লাশ উদ্ধারের তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সবগুলো লাশ উদ্ধার হয়েছে পোশাক কারখানা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, যে ১৬ জনের লাশ মিলেছে, তাদের সবার চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পরেই লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তার দপ্তরে সাংবাদিকদের বলছেন, “সবগুলো লাশের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। তবে পোশাক-আশাক ও নানা আলামত দেখে ১০ জনের লাশ শনাক্তের দাবি করেছেন স্বজনেরা।”
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে সমস্যা এড়াতে এখন সবগুলো লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হবে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে স্বজনদের কাছে আপাতত এই ১০টি লাশ হস্তান্তর করা যাবে।”
যে ১০ জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে একটি সারোয়ারের।
তার বন্ধু আমানুল্লাহ বলেন, “ওর বাঁ হাতের বুড়া আঙ্গুলে আরেকটা জমজ আঙ্গুল আছে। শরীরের কিছু বোঝা যায় না, মুখের আকৃতিও বোঝা যায় না। ওই আঙ্গুল দেখে সারোয়ারকে ওর ভাই শনাক্ত করেছে।”
রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান বলেন, লাশ শনাক্ত করার দাবি নিয়ে স্বজনেরা পুলিশের কাছে আসছেন। তবে প্রত্যেকটি লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার পর হস্তান্তরের কার্যক্রম শুরু হবে। পাশাপাশি স্বজনদেরও ডিএনএ নমুনা এখনই নিয়ে রাখা হবে।
রাসায়নিকের গুদামে লাগা আগুন নেভাতে ‘কয়েকদিন লাগতে পারে’ বলে মঙ্গলবার রাতে বলেছিলেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।
বুধবার দুপুর পর্যন্ত আগুন না নেভার তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
গুদাম থেকে এখনো বিষাক্ত ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অক্সিজেন ট্যাংক নিয়ে, গ্যাস মাস্ক পড়ে সেখানে কাজ করছেন।
এদিন দুপুরে অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে বুয়েটের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।