জাতীয়

জরুরি অবস্থা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের আইন সংস্কারে ঐকমত্য

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ই জুলাই ২০২৫, ২১:৪৮

জরুরি অবস্থা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের আইন সংস্কারে ঐকমত্য

জরুরি অবস্থা জারি ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ আইনের সংস্কারে একমত্য হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, জরুরি অবস্থা জারিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুস্বাক্ষরের পরিবর্তে বিরোধী দলীয় নেতা বা উপনেতার মতামত নিতে হবে, যা মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।


আর প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে। তবে দুই- তৃতীয়াংশ আসন পাওয়া সরকার চাইলে এ নিয়ে দুই জন বিচারপতির প্যানেল গঠন করে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে  দুই জনের একজনকে বাছাই করতে পারবে। অবশ্য এর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পক্ষে সবাই।



রবিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১২তম দিনে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় দলগুলো।


বিকালে ব্রিফিংয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড.  আলী রীয়াজ এবং বিএনপি ও জামায়াতসহ প্রায় প্রতিটি দলের প্রতিনিধিরা অভিন্ন সুরে কথা বলেন।


ব্রিফিংয়ের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলো আজকের আলোচনায় দুটি বিষয়ে একমত হয়েছে। একটি জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং আরেকটি হচ্ছে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ আইনের সংস্কার।


জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত


ড. আলী রীয়াজ  জানান, জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত আইনের ১৪১ (ক) সংশোধনের বিষয়ে একমত হয়েছে দলগুলো। এতে বিদ্যমান আইনে প্রধানমন্ত্রীর অনুস্বাক্ষরে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করেন। তবে নতুন প্রস্তাবে এ নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হতে হবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি সংসদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতার মতামত নিতে হবে। কোনও কারণে তিনি উপস্থিত না থাকতে পারলে বিরোধী দলীয় উপনেতা থাকবেন। এতেও একমত না হলে বিরোধী দলীয় নেতা তার মতামত নিজস্ব অবস্থান থেকে জানাবেন। আর সে সময় নির্বাচিত সরকার না থাকলে সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে গঠিত সরকার ও প্রধান বিরোধী দলীয় নেতার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।


জরুরি অবস্থা চলাকালীন নাগরিকের জীবন নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার খর্ব না করার বিষয়েও একমত হয়েছে দলগুলো।


প্রধান বিচারপতি নিয়োগ


নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, সিনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। তবে কোনও দল চাইলে তাদের নির্বাচনে এ নিয়ে ভিন্ন ইশতেহার দিতে পারে। দুই- তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে তারা দুই জনের একটি প্যানেল গঠন করতে পারবেন। এর মধ্যে একজনকে নিয়োগ দেওয়া যাবে। তবে এ ব্যাপারে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। অবশ্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজনের নিয়োগের বিষয়ে বেশিরভাগ দল একমত।


তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ


সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত দলগুলো। তবে এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বি-মত রয়েছে। তাই এ বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিস্তারিত আলোচনা শেষে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড. আলী রীয়াজ।


রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জরুরি অবস্থা জারি ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ আইন সংশোধনের বিষয়ে একমত হয়েছে তার দল। তিনি বলেন, জরুরি আইন রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার হোক, তা চাই না।


সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানান,  রাজনৈতিক দলের নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে যেন ব্যবহৃত না হয়। তিনি বলেন,  জরুরি অবস্থা জারির আগে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতার মতামত ও মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিষয়ে আমাদের দ্বিমত নেই। আর বিরোধী দলীয় নেতা অনুপস্থিত থাকলে বিরোধী দলীয় উপনেতার মতামত নেওয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের আপত্তি নেই।


তবে এক্ষেত্রে যেন মৌলিক অধিকার খর্ব না হয়। এ আইনের সুযোগে যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় দণ্ডিতরা যেন কোনোভাবেই সুযোগ নিতে না পারে।


তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে আপিল বিভাগের তিন জনের প্যানেলের কথা বলছিলাম। পরে দুই জনের বিষয়ে একমত হয়েছি। এই ক্ষেত্র সিনিয়রকে করার কথা বলেছে কোনও কোনও দল। ঐক্যের স্বার্থে  আমরা তা মেনে নিয়েছি।


কেয়ারটেকার সরকারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে আলাদা করা যায় কিনা। এ নিয়ে অনেকে বলেছেন। আবার বিকল্প পদ্ধতির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে বলে জানান বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।


জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতার মতামত নিতে হবে। বিরোধী দলীয় নেতা অনুপস্থিত থাকলে বিরোধী দলীয় উপনেতা থাকবেন। এটি আমাদের চূড়ান্ত মতামত। অন্যান্য দলও একমত।


আর প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সিনিয়রিটি অনুসরণের পক্ষে জামায়াত। কারণ দুই বা তিন জনের প্যানেল থাকলে সেখানে ছিদ্র তৈরি হতে পারে। এতে বিতর্কিত লোাক সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া সরকারের পা ছুঁয়ে সালাম করা লোকও নিয়োগ পেতে পারেন।


আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে জামায়াত আরও বিস্তারিত আলোচনার পক্ষে।


শুধু বিএনপি ও জামায়াত নয় এনসিপি, এবি পার্টি,  বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ প্রতিটি রাজনৈতিক দলই এই দুই ইস্যুতে ঐক্যমত পোষণ করেছে।