অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯শে জুলাই ২০২৫, ১৮:৫৯
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় কেউ অনাহারে নেই। তাঁর দাবি, ‘গাজায় অনাহারে রাখার কোনো নীতি (আমাদের) নেই এবং গাজায় কেউ না খেয়েও নেই। যুদ্ধ চলার পুরো সময় আমরা সেখানে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিয়েছি। না হলে গাজায় এখন কোনো মানুষই থাকত না।’
তবে গাজায় কেউ অনাহারে না থাকার নেতানিয়াহুর এ দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেননি তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উপত্যকাটির অস্থিচর্মসার মানুষের যেসব ছবি প্রকাশ পাচ্ছে সেগুলোর কথা উল্লেখ করে গতকাল সোমবার তিনি বলেন, ‘ওই শিশুদের খুবই ক্ষুধার্ত দেখাচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণসহায়তা প্রবেশের সুযোগ করে দিতে ইসরায়েল এ সপ্তাহান্তে সেখানে মানবিক বিরতি ঘোষণা করেছে। আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা ও অন্যান্য উদ্যোগের ঘোষণাও এসেছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও ত্রাণসহায়তা প্রবেশের সুযোগ করে দিতে ইসরায়েল এ সপ্তাহান্তে সেখানে মানবিক বিরতি ঘোষণা করেছে। আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা এবং অন্যান্য উদ্যোগের ঘোষণাও এসেছে।
কিন্তু বাস্তবে সেখানে পরিস্থিতির খুবই সামান্য বা একেবারেই পরিবর্তন হয়নি বলে জানাচ্ছেন গাজার বাসিন্দারা।
জাতিসংঘ বলেছে, ত্রাণসহায়তা বৃদ্ধির এ উদ্যোগ এক সপ্তাহ ধরে চলবে। তবে ইসরায়েল এখনো তাদের এ ব্যবস্থা কত দিন জারি থাকবে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি।
ইসরায়েল আকাশ থেকে গাজায় ত্রাণ ফেলেছে—এমন একটি স্থানে উপস্থিত ছিলেন হাসান আল-জালান। তিনি বলেন, ‘এভাবে ত্রাণ দেওয়া ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য অবমাননাকর।’ যেখানে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে সেখানে মানুষ ত্রাণের জন্য লড়াই করছে। ওপর থেকে ছোলাভর্তি ক্যানগুলো মাটিতে পড়ে ভেঙে ভেতরের সব ছড়িয়ে–ছিটিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এভাবে ত্রাণ দেওয়া ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য অবমাননাকর।
হাসান আল-জালান, আকাশ থেকে ইসরায়েলের ত্রাণ ফেলার প্রত্যক্ষদর্শী
ইসরায়েলের দাবি, হামাসের কারণে গাজায় ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, হামাস সদস্যরা ত্রাণ লুট করে নিজেদের কাছে নিয়ে নিচ্ছেন এবং গাজায় নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সেগুলো ব্যবহার করছেন।
অবশ্য বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘও গাজায় পরিকল্পিতভাবে ত্রাণ লুট হওয়ার ইসরায়েলি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বরং জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় যথেষ্ট পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিলে লুটপাট কমে যাবে বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
অনাহারে মৃত্যু বাড়ছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) রোববার বলেছে, এ মাসে গাজায় অনাহারে ভুগে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৪ শিশু রয়েছে। এ বছরের প্রথম ৬ মাসে উপত্যকাটিতে অনাহারে ১১ জন মারা গেছেন। সে তুলনায় এক মাসে ৬৩ জনের মৃত্যু উদ্বেগজনক রকম বেশি।
ফিলিস্তিনি মা সামাহ মাতার অপুষ্টিজনিত অসুস্থতায় ভোগা ছেলে ইউসেফকে কোলে ধরে রেখেছেন
ফিলিস্তিনি মা সামাহ মাতার অপুষ্টিজনিত অসুস্থতায় ভোগা ছেলে ইউসেফকে কোলে ধরে রেখেছেনফাইল ছবি: রয়টার্স
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি বলে উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে, এ মাসে গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগে ৮২ জন মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে ২৪টি শিশু ও ৫৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত রোববার বলেছে, এ মাসে গাজায় অনাহারে ভুগে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৪ শিশু রয়েছে। এ বছরের প্রথম ৬ মাসে উপত্যকাটিতে অনাহারে ১১ জন মারা গেছেন। সে তুলনায় এক মাসে ৬৩ জনের মৃত্যু উদ্বেগজনক রকম বেশি।
গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়, বিগত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সেখানে যুদ্ধের মধ্যে হতাহতের প্রকৃত তথ্য পাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস বলে বিবেচনা করে জাতিসংঘ।
দ্য পেশেন্টস ফ্রেন্ডস হাসপাতাল গাজার উত্তরাঞ্চলে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য প্রধান জরুরি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। হাসপাতালটি থেকে বলা হয়েছে, এ মাসে তারা প্রথমবারের মতো অনাহারে এমন শিশুদের মৃত্যু দেখছে, যারা আগে অসুস্থ ছিল না।
ইসরায়েল বলছে তারা গাজায় ত্রাণ দিচ্ছে, তাহলে ফিলিস্তিনিরা না খেয়ে মরছে কেন
অনাহারে মারা যাওয়া কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ বা কিডনির রোগে ভুগছিলেন। দীর্ঘদিন অনাহারে থাকার কারণে তাঁদের অসুস্থতা আরও গুরুতর হয়ে উঠেছিল বলে জানান গাজার চিকিৎসা কর্মকর্তারা।
জিএইচএফ পরিচালিত একটি ত্রাণ সংস্থার কাছে মানুষের ভিড়
জিএইচএফ পরিচালিত একটি ত্রাণ সংস্থার কাছে মানুষের ভিড়ফাইল ছবি: এএফপি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে, উত্তর গাজায় অনাহারে চরম অপুষ্টির মাত্রা তিন গুণ বেড়েছে। সেখানে পাঁচ বছরের নিচে প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে প্রায় একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। মধ্য ও দক্ষিণ গাজায়ও অপুষ্টির মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে।
খাদ্যসংকট নিয়ে কাজ করা শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ কয়েক মাস ধরে গাজায় দুর্ভিক্ষের সতর্কতা দিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল প্রবেশাধিকার সীমিত রাখায় সেখান থেকে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। তাই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা যাচ্ছে না।
গাজায় মাত্র চারটি বিশেষায়িত কেন্দ্র রয়েছে; যেখানে অপুষ্টির চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জাতিসংঘ বলেছে, সেগুলোতে ভিড় উপচে পড়ছে।
খাদ্যসংকট নিয়ে কাজ করা শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ কয়েক মাস ধরে গাজায় দুর্ভিক্ষের সতর্কতা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েল প্রবেশাধিকার সীমিত রাখায় সেখান থেকে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। তাই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা যাচ্ছে না।