রাজনীতি

জুলাই ঘোষণাপত্র ‘একতরফা, পক্ষপাতদুষ্ট’: গণফোরাম

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৭ই আগস্ট ২০২৫, ২০:০৪

জুলাই ঘোষণাপত্র ‘একতরফা, পক্ষপাতদুষ্ট’: গণফোরাম


সদ্যঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রকে ‘একতরফা ও পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদ মিজানুর রহমান।


তিনি বলেছেন, এর পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্রে ‘ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা’ লক্ষণীয়। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের দাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্রে ‘ভবিষ্যত রাষ্ট্র ব্যবস্থার কোনো রূপরেখা স্থান পায়নি’।


বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন মিজানুর রহমান।



তিনি বলেন, ‘‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ১০ এপ্রিলের প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেন্ডেন্টের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। দীর্ঘ ৫৩ বছরে কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণয়ন পদ্ধতি নিয়ে কখনও প্রশ্ন উত্থাপন করেনি।”


সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের লিখিত বক্তব্যে সংবিধান নিয়ে বলা হয়, জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংবিধান সংযোজন-পরিমার্জন করা যেতে পারে, তবে সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে মুক্তিযুদ্ধকেই বিতর্কিত করা হয়। একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তিই বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকে।


“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণয়ন পদ্ধতি এবং কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্রে বিতর্ক সৃষ্টি করার কারণে মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে। শুধু বাহাত্তরের সংবিধানকে দায়ী করে (মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী) সরকারগুলোর রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যর্থতাকে আড়াল করার হীন মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতাকে কোনোভাবেই সংবিধানের উপর চাপিয়ে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না।”



জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার অনুষ্ঠানে দলগুলোর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে অভিযোগ করে সাধারণ সম্পাদক মিজান বলেন, “সরকার বিভিন্ন সময় তার আলোচনা ও কাজে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈষম্য তৈরি করেছে, নানাভাবে বিভক্তি তৈরি করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে জন-আকাঙ্ক্ষা ছিল সংস্কার করে গণতান্ত্রিক চরিত্রে রাষ্ট্র ফিরে আসবে, কিন্তু সর্বশেষ জন-আকাঙ্ক্ষার জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার এক ধরনের লুকোচুরি করেছে।


“জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে সরবরাহ করা হয়েছে। ঘোষণাপত্র পড়ার দিন দুপুর ১২টায় শুধু সাধারণ সম্পাদকের নামে একটি কার্ড দলীয় অফিসে পাঠানো হয়েছে। এটাও একটি বৈষম্যমূলক আচরণ। তারপরও সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সেখানে গিয়েছি। সেখানেও অনেক বৈষম্য করা হয়েছে।”


গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘বিগত সময়ে যারা শাসনক্ষমতায় এসেছে, তারা সংবিধানকে অনুসরণ না করে অসাংবিধানিকভাবে দেশ পরিচালনার চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা ছিল না, আইনের শাসন ছিল না, বিচারের নামে অনেক জায়গায় অবিচার করা হয়েছে। এতে জনগণ ক্ষুব্ধ ছিল।


“রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা ছিল, তাদের এই দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। সংবিধানের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের এড়িয়ে চলা যাবে না।”


সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, শাহ নুরুজ্জামান, লতিফুল বারী হামিম, গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, টি এইচ এম জাহাঙ্গীর,গবেষণা ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।