শিক্ষা

জাকসুর নতুন ভিপি ‘স্বতন্ত্র’ জিতু, শিবিরের মাজহারুল জিএস

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:১৬

জাকসুর নতুন ভিপি ‘স্বতন্ত্র’ জিতু, শিবিরের মাজহারুল জিএস



তেত্রিশ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ভিপি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাজহারুল ইসলাম জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন।


AvR শনিবার সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণের দুইদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান।


ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, আব্দুর রশিদ জিতু ৩৩৩৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ছাত্রশিবিরের আরিফুল্লাহ আদিব ২৩৮৯ ভোট পেয়েছেন।



অপরদিকে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম ৩৯৩০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাসের প্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম পেয়েছেন ১২৩৮ ভোট।


যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের (এজিএস) দুটি পদেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান ২৩৫৮ ভোট এবং আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ৩৪০২ জয় পেয়েছেন।


১৯টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ১৫টি জিতেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। বাকি চারটি পদের মধ্যে ভিপিসহ তিনটি পদে স্বতন্ত্র এবং একটিতে বাগছাস প্রার্থী জয় পেয়েছেন।



কার্যকরী সদস্যের ছয় পদের পাঁচটি জিতেছেন শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা, একটিতে বাগছাসের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।


জাকসু নির্বাচনে জয়ী ভিপি স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু (বাম থেকে দ্বিতীয়) এবং জিএস নির্বাচিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাজহারুল ইসলাম (বাম থেকে তৃতীয়)।

জাকসু নির্বাচনে জয়ী ভিপি স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু (বাম থেকে দ্বিতীয়) এবং জিএস নির্বাচিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাজহারুল ইসলাম (বাম থেকে তৃতীয়)।



অন্যান্য পদে জয় পেয়েছেন



শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক- আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল)


পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক- মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল)


সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক- মো. জাহিদুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)


সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র)


সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক- মো. রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল)


নাট্য সম্পাদক- মো. রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)


ক্রীড়া সম্পাদক- মাহমুদুল হাসান কিরণ (স্বতন্ত্র)


সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী)- ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল)


সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ)- মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল)


তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক- মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল)


সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক- আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস)


সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী)- নিগার সুলতানা (শিবির প্যানেল)


সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ)- মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল)


স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক- হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল)


পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক- মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল)।


কার্যকরী সদস্য


মো. তরিকুল ইসলাম (পুরুষ, শিবির প্যানেল)


মো. আবু তালহা (পুরুষ, শিবির প্যানেল)


মোহাম্মদ আলী চিশতি (পুরুষ, বাগছাস)


নাবিলা বিনতে হারুণ (নারী, শিবির প্যানেল)


ফাবলিহা জাহান (নারী, শিবির প্যানেল)


নুসরাত জাহান ইমা (নারী, শিবির প্যানেল)।


জাকসুতে অধিকাংশ পদে জয়ের মধ্য দিয়ে ডাকসুর পর আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিল ইসলামী ছাত্রশিবির, যারা এর আগে কখনো জাকসুতে কোনো পদ পায়নি।


ডাকসু নির্বাচনের দুই দিনের মাথায় ঢাকার অদূরে সাভারের এই ক্যাম্পাসের ভোটগ্রহণ নিয়ে সারাদেশের মানুষের আগ্রহ ছিল।


জাকসুর ফলাফল ঘোষণার আগে ২১টি হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।


প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার দিনভর ভোট শেষে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পড়ে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ভোট গণনা শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে। এই দীর্ঘ সময় পর ফলাফলের ঘোষণা এল।




ভোটগ্রহণে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার অভিযোগের পর অধিকাংশ প্যানেলের বর্জন, দীর্ঘ সময় ধরে ভোটগণনার কাজের মধ্যে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষকের মৃত্যুর মত ঘটনা লেখা থাকবে এ নির্বাচনের আমলনামায়।


তবে মূল বিপত্তি ঘটেছে অভিযোগ থেকে মুখ রক্ষার জন্য ওএমআর মেশিনের বদলে হাতে ভোট গুনতে গিয়ে।


জামায়াত সংশ্লিষ্ট এক কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন কেনার অভিযোগ উঠলে নির্বাচন কমিশন ভোট গণনার কাজটি মেশিনের বদলে হাতে করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তা করতে গিয়েই লেজেগোবরে দশা হয়।


১৯৭২ সালে শুরু হওয়া জাকসু নির্বাচনের এবারের দশম আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ছিল শুরু থেকে। ছাত্র সংগঠনগুলোও ভোটের দাবিতে সোচ্চার ছিল।


২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন পরিস্থিতিতে কয়েক দফা পেছানোর পর জাকসু নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয় ১১ সেপ্টেম্বর। ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাগছাস, বাম-প্রগতিশীল, স্বতন্ত্রদের অন্তত সাতটি প্যানেলসহ অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।



জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ-জাকসুর দশম নির্বাচনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে এবার। সর্বশেষ ১৯৯২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল ছাত্রদলের প্যানেল।