জাতীয়

জুলাই সনদে সই করতে প্রস্তুত বিএনপি, দ্বিধায় জামায়াত-এনসিপি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:২৮

জুলাই সনদে সই করতে প্রস্তুত বিএনপি, দ্বিধায় জামায়াত-এনসিপি



জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এখনো জুলাই সনদে সইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাদের মতে, সনদটিকে দলীয় সমর্থন দেওয়ার আগে এর একটি স্পষ্ট আইনি কাঠামো থাকা প্রয়োজন।



তাদের যুক্তি, আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদে সই করলে এর কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাবে না।


তবে বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দল সনদে সই করতে সম্মত হয়েছে।


বিএনপি সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে যাওয়ার জন্য প্রতিনিধি দল চূড়ান্ত করতে তারা গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত বৈঠক করেছে।


সূত্র জানায়, বিএনপি জুলাই সনদে সইয়ের জন্য মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে পাঠাতে পারে।



বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশন সনদের চূড়ান্ত সংস্করণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠায় এবং জানায়, এতে সবার মতামত প্রতিফলিত হয়েছে।



কমিশন আজ বিকেল ৫টার মধ্যে প্রতিটি দলকে জুলাই সনদে সইয়ের জন্য দুজন করে প্রতিনিধির নাম দিতে বলেছে।


আগামীকাল সকালে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে কমিশন। প্রয়োজনে সোমবার আবার বৈঠক করবে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করতে।


জামায়াত ও এনসিপিও গতকাল আলাদা বৈঠক করে সনদ পর্যালোচনা করেছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ জানান, দল এখনো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে এবং অভ্যন্তরীণ পরামর্শ শেষে সিদ্ধান্ত নেবে।


এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, 'কমিশন যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের ওপর দেয়, তাহলে বিষয়টি পরবর্তী সংসদে গড়াবে কিংবা অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেবে এই সনদে সই করবে কিনা।'


ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন জানান, তাদের নেতারা সাংগঠনিক সফরে থাকায় এখনো সনদটি মূল্যায়ন করতে পারেননি।


তিনি যোগ করেন, কেবল অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আইনি কাঠামোর নিশ্চয়তা পেলে তারা সই করবে।


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও (সিপিবি) এখনো সনদে সইয়ের ব্যাপারে অনিশ্চিত। দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, চূড়ান্ত দলিলে যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ না করার ধারা থাকে, তাহলে সিপিবি সই করবে না।


২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে এই সনদে সরাসরি স্বীকৃতি না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট গণঅধিকার পরিষদ। যদিও চূড়ান্ত খসড়ায় বৃহত্তর আন্দোলনের উল্লেখ আছে। দলটির দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান জানান, তারা এখনো বিষয়টি বিবেচনা করছে।


বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি ও সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আপত্তি তুলেছে। এসব বিষয় সমাধান না হলে তারা সই করবে না বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।


অন্যদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সনদে সই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং কমিশনে তাদের সহ-সভাপতি তানিয়া রবের নাম পাঠাবে বলে নিশ্চিত করেছেন সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।


বৃহস্পতিবার রাতে ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যমুনায় বৈঠক করেন। সূত্র জানায়, কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।


কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সনদের কিছু ধারা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে অগ্রগতি হয়েছে, বিশেষ করে যেগুলো সাংবিধানিক সংশোধনের সঙ্গে যুক্ত নয়।


তিনি জানান, দলগুলো একমত হয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার করতে পারে এবং কিছু ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে।


তিনি বলেন, 'সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় শাসনব্যবস্থা ও কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য মৌলিক এবং এগুলো অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনেক বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে নতুন বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে। এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।'